ক্ষেতলালের তুলশীগঙ্গা নদীর ন্যাব্যতা হারিয়ে মরা নদীতে পরিণিত
উত্তর জনপদের জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বুক চিরে বয়ে চলেছে ঐতিহ্যবাহি তুলশী গঙ্গা ও হারাবতি নদীসহ অসংখ্য খাল। কিন্তু কালের বিবর্তন সময়ের ব্যাবধান এবং দখলদারের আধিপত্ত ও খননের অভাবে ন্যাব্যতা হারিয়ে নদীটি এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে |
নদী ও খালগুলি এক সময় ওই এলাকার কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখত। সেই নদী আজ হারাতে বসেছে প্রকৃত রুপ। ড্রেজিং ও পুন: খনন করলে বদলে যাবে কৃষিসহ এলাকার দৃশ্য পট। সুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি শুকিয়ে মরা নদীতে পরিনত হয়। আবার বর্ষা কালে একটু বৃষ্টি হলেই নদীর দু’কুল ছাপিয়ে প্লাবিত হয় নিম্ন অঞ্চল। ফসলী জমিতে পানি ঢুকে নষ্ট হয় নদী পাড়ের শত শত জমির ফসল। প্লাবিত হয় নদী পাড়ের গ্রামগুলো। এক সময় যে নদীতে চলত ছোট বড় ডিঙ্গিসহ বাহারী রংয়ের পাল তোলা নৌকা। দূর দূরান্ত থেকে বড় বড় নৌকায় নানা পণ্য সাজিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের কাজে নদী পথে আসা যাওয়া নিয়ে রচিত হয়েছে কত গল্প কাহিনী। বগুড়া থেকে জামালগঞ্জ রোডের মাঝখানে তুলশীঙ্গা নদীর পারাপারে ঘাট ছিল। আশির দশক পর্যন্ত ঘাটটি ইজারা দেওয়া হত। দাশড়া গ্রামের বাদেশ আলী নামের এক ব্যক্তি বার বার ঘাটটি ইজারা নেওয়ার কারণে ওই ঘাটটি বাদেশ আলীর ঘাট নামে আজও জনশ্রুতি আছে। যদিও বর্তমানে নদী আছে নেই বহমান স্রোতের কলতান। নাব্যতা হারিয়ে নদীর বুকে চর জেগে এখন শুধু বালুচর। নদীর তলদেশ বালিতে ভরাট হয়ে পানি শূণ্যতার কারণে হারিয়ে গেছে হাজারো প্রজাতির দেশীয় মাছ। নদী পাড়ের জেলেরা অন্য পেশা বেছে নিয়েছে। নদীর তলদেশ দেখে আজও বোঝার উপায় নেই এটা নদী না ফসলি জমি। সবুজ শ্যামলের দিগন্ত জোড়ে ধানের ক্ষেত। জমি জমা নেই এমন অনেকে এখন বুনে গেছে নদীর তলদেশের জমির মালিক। সেখানে চাষ হচ্ছে বোরো ধান, কোথাও আবার জমে আছে কচুরিপানা। দখলদারেরা নদীর গতিপথ রোধ করে চাষাবাদের ফলে অনেকাংশে হারিয়ে ফেলেছে তার চিরচিনা প্রকৃতির দেওয়া আদি সেই রূপ। মুনঝার বাজারের কৃষক আজিজার রহমান বলেন, নদী পাড়ের জমিগুলোতে নদী থেকে সেচ দিয়ে ফসল চাষাবাদ করতাম। নদীতে পানি না থাকার কারণে তা এখন আর সম্ভব হয় না। এ কারণে নদী পাড়ের মানুষ অনেকেই নদীর ভিতরে খরা মৌসুমে বোরো ধান চাষ করি। জিয়াপুর গ্রামের জেলে ধীরেন চন্দ্র বলেন, আগে সারা বছর নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতাম। এখন নদীতে পানি না থাকায় আর মাছ নাই। তাই আমি এখন অটো ভ্যান চালাই।
ক্ষেতলাল উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বলেন, নদী খনন আমাদের আওতায় নয় তুলশীগঙ্গা নদীর নাব্যতা সমস্যা জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের।এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাংসদের কিছুটা সদইচ্ছা পোষণ করলে নদীটি পুন:খননের ক্ষেত্রে অনেকটা সহজ হবে। কেননা এলাকার উন্নয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।